তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের জন্য সাফল্যের ২৩ টিপস | উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়

সফল হওয়া মানে প্রায়শই তাদের কাছ থেকে শেখা যারা ইতিমধ্যে তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে। একজন সফল পরামর্শদাতা কোনো উদ্যোক্তার জন্য একটি আশীর্বাদ, কিন্তু প্রত্যেকেই তো এমন একজনকে খুঁজে পায় না। সফল ব্যক্তিদের জীবন থেকে তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের জন্য সাফল্যের ২৩ টিপস এখানে রইলো  

 

আপনি যদি এখনও আপনার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক গুরু খুঁজে না পান তবে শুরু করার জন্য টিপস গুলো আপনার সহায়ক হবে নিশ্চিত! 

১. নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন

 

রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন যে তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা হল নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানানো। জীবনকে তিনি একটি ‘লং ইউনিভার্সিটি এডুকেশন এর মতো বিবেচনা করেন, যেখানে তিনি প্রতিদিন আরও শিখতে পারেন। আপনিও পারবেন!

 

২. যে কাজে আপনার আগ্রহ আছে তাই বেঁছে নিন

 

কোন সন্দেহ নেই যে ব্যবসা চালাতে অনেক সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। স্টিভ জবস একবার বলেন যে আপনার জীবনে সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হল এমন কাজ করা যা আপনি সত্যই বিশ্বাস করেন যে আপনি করতে পারবেন।

 

৩. ঝুঁকি নিন

 

আমরা আমাদের প্রচেষ্টার ফলাফল কখনই জানি না যদি না আমরা এটি করি। জেফ বেজোস বলেছিলেন যে এই মনোভাব তাকে সাহায্য করেছে যে তিনি জানতেন তিনি ব্যর্থতার জন্য অনুশোচনা করবেন না, বরং তিনি চেষ্টা না করার জন্য অনুশোচনা করবেন। তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের জন্য ঝুঁকি নেয়ার মনোভাব অনেকটাই এগিয়ে দেয়। 

 

৪. নিজেকে বিশ্বাস করুন

 

হেনরি ফোর্ড যেমনটি বিখ্যাতভাবে বলেছিলেন, “আপনি মনে করেন আপনি পারবেন, বা মনে করুন আপনি পারবেন না, দুটো ই ঠিক আছে।” নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন যে আপনি সফল হতে পারবেন, এবং বিভিন্ন বাধার মধ্য দিয়েও আপনি সাফল্যের পথ খুঁজে পাবেন। যদি তা না করেন, তাহলে আপনি শুধু অজুহাত খুঁজে পাবেন।

 

৫. দূরদৃষ্টি রাখুন

 

টাম্বলারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, ডেভিড কার্প, উল্লেখ করেছেন যে একজন উদ্যোক্তা হলেন এমন একজন যিনি কিছুর প্রতি দূরদৃষ্টি রাখেন এবং এটি তৈরি করার অদম্য ইচ্ছা রাখেন। আপনার ভিশন সর্বদা ক্লিয়ার রাখুন। তরুণ উদ্যোক্তাদের সাফল্যের টিপস গুলোর মধ্যে এটি এক বিশেষ আইডিয়া হতে পারে ! 

 

৬. ভাল মানুষ খুঁজুন

 

আপনি কার সাথে আছেন এর উপর নির্ভর করবে আপনি কি হয়ে উঠবেন। লিঙ্কডইন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান বলেন যে নিজেকে পরিবর্তন করার দ্রুততম উপায় হল এমন লোকদের সাথে আড্ডা দেওয়া ( hang out ) যারা ইতিমধ্যেই আপনি যেমন হতে চান সেরকম বৈশিষ্ট্যের।

 

৭. ফেস ইউর ফিয়ার্স

 

সহজ কোথায় যেটা আপনার ভয়ের কারণ তা মোকাবিলা করুন। ভয় কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়, তবে তা অবশ্যই করা উচিত। আরিয়ানা হাফিংটন একবার বলেছিলেন যে তিনি ‘নির্ভীকতা’ বা ফিয়ারলেসনেস কে একটি ‘মাসল’ মতো মনে করেন — যত বেশি আপনি এটি অনুশীলন করেন, তত এটি শক্তিশালী হয়।

 

আরো পড়ুন : মধুর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

৮. পদক্ষেপ নিন

 

পৃথিবী মহৎ আইডিয়ায় ভরপুর, কিন্তু সাফল্য কেবল কর্মের মাধ্যমেই আসে। সো টেক একশন। ওয়াল্ট ডিজনি একবার বলেন যে শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল বলা ছেড়ে দেওয়া এবং করা শুরু করা। এটি আপনার সাফল্যের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য। তরুণ উদ্যোক্তাদের সাফল্যের টিপস গুলোর মধ্যে এটিও  বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে।  !  

 

৯. পর্যাপ্ত সময় দিন

 

কেউ অবিলম্বে সফল হয় না, তাই ভুলবেন না ‘সবাই-ই এক সময় শিক্ষানবিস ছিল’। স্টিভ জবস যেমন বিজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেছেন, “যদি আপনি ঘনিষ্ঠভাবে দেখেন, বেশিরভাগ রাতারাতি সাফল্যই অনেক সময়ের একটা ফলাফল।” আপনার কোম্পানিতে সময় ইনভেস্ট করতে কখনো ভয় পাবেন না।

 

১০. ‘এনার্জি ম্যানেজ’ করুন ধূর্ততার সাথে

 

আপনার শক্তি আপনি আপনার সময় দিয়ে যা করতে পারেন তাকে সীমিত করে, তাই এটি বুদ্ধিমানের সাথে পরিচালনা করুন।

 

১১. একটি দুর্দান্ত দল তৈরি করুন

 

নিশ্চয় জানেন কেউ একা ব্যবসায় সফল হয় না। যারা চেষ্টা করে তারা সবসময় একটি দুর্দান্ত ‘টিম ওয়ার্কের’ কাছে হেরে যাবে। আপনার সাফল্য বাড়ানোর জন্য নিজের একটা দুর্দান্ত দল এবং দলীয় মনোভাব তৈরি করুন।

 

১২. হায়ার ক্যারেক্টার

 

আপনি আপনার দল তৈরি করার সাথে সাথে আদর্শ চরিত্র এবং মূল্যবোধের মানুষ খুজুন। কেননা সবসময় দক্ষতার উপর আপনি কাউকে প্রশিক্ষিত করতে পারেন, কিন্তু কারও মূল্যবোধকে আপনার কোম্পানির জন্য আপনি উপযুক্ত করে তুলতে পারবেন না।

১৩. মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা

 

রিচার্ড হ্যারক, একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, তরুণ উদ্যোক্তাদের এই পরামর্শ দিয়েছেন: “মূলধন সংগ্রহ করা প্রায় সময়ই আপনার ধারণার চেয়ে কঠিন এবং এটি সবসময় বেশি সময় নেয়। তাই এর জন্য পরিকল্পনা করুন।”

 

১৪. আপনার লক্ষ্য জানুন

 

আইকন্ট্যাক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রায়ান অ্যালিস উল্লেখ করেছেন যে প্রতিদিন আপনার গন্তব্যকে মনে ধারণ করুন। কারণ তা সুনিশ্চিত করে যে আপনি এর দিকেই অগ্রসর হচ্ছেন। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং প্রতিদিন নিজেকে সেগুলি মনে করিয়ে দিন।

 

আরো পড়ুন : কাঠ বাদামের ৫টি প্রমাণ-ভিত্তিক স্বাস্থ্য উপকারিতা

১৫. ভুল থেকে শিখুন

 

অনেক উদ্যোক্তা তাদের করা ভুলগুলি কেই তাদের ‘সেরা শিক্ষক’ হিসাবে নির্দেশ করেন। আপনি যখন আপনার ভুল থেকে শিখবেন, আপনি সাফল্যের কাছাকাছি চলে যাবেন – যদিও প্রাথমিকভাবে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন।

১৬. আপনার গ্রাহককে জানুন

 

ডেভ থমাস, ওয়েন্ডির প্রতিষ্ঠাতা, তার সাফল্যের তিনটি চাবিকাঠির মধ্যে ‘নিজ গ্রাহককে জানা’ কে একটি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আপনি অন্য কারো থেকে যাদেরকে তুলনামূলক ভালোভাবে পরিবেশন করেন তাদের জানুন এবং তাহলেই তাদের প্রয়োজনীয় সমাধান দিতে সক্ষম হবেন। 

 

১৭. অভিযোগ থেকে শিখুন

 

বিল গেটস একবার বলেছিলেন যে আপনার সবচেয়ে ‘অখুশি গ্রাহকরা’ আপনার শেখার সবচেয়ে বড় উৎস। ‘অখুশি গ্রাহকরা’ই নাহয় আপনাকে শেখাক যে আপনার পরিষেবার ছিদ্র আসলে কোথায়।

 

১৮. গ্রাহকদের ইনপুট জন্য জিজ্ঞাসা করুন

 

গ্রাহকরা কি চান বা তাদের প্রয়োজন টা কি- তা অনুমান করা কখনই সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে না। আপনাকে অবশ্যই তাদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং তারপর তারা যা বলে তা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে ।

 

১৯ . বুদ্ধির সাথে ব্যয় করুন।

 

আপনি যখন আপনার ব্যবসায় অর্থ ব্যয় করেন, তখন তা বুদ্ধির সাথে ব্যয় করার বিষয়ে সতর্ক হন। বোকামিতে অত্যধিক খরচ করা এবং খুব তাড়াতাড়ি পুঁজি ফুরিয়ে যাওয়া সহজ।

 

২০. আপনার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বুঝুন

 

Zappos-এর প্রতিষ্ঠাতা টনি Hsieh একবার বলেছিলেন, “এমন গেম খেলবেন না যেগুলি আপনি বোঝেন না, এমনকি যদি আপনি দেখতে পান যে অনেক লোক তাদের থেকে অর্থ উপার্জন করছে।” সত্যিকার অর্থে শিল্প সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি।

 

২১. কাস্টমারদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দিন

 

গুগলের ল্যারি পেজ উদ্যোক্তাদের গ্রাহকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সরবরাহ করতে উত্সাহিত করেন। এটি আপনার ইন্ডাস্ট্রি এর প্রতি সবাইকে আগ্রহী করবে এবং কাস্টমারদের আপনার ইন্ডাস্ট্রি এর প্রতি অনুগত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের জন্য সাফল্যের টিপস গুলো হয়তো আপনার জীবনকেই পরিবর্তন করে দিবে!  

 

২২. সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না

 

নেটওয়ার্কিং, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং পরামর্শের জন্য প্রচুর সংস্থান রয়েছে। নেটওয়ার্কিং শুধুমাত্র নতুন ব্যবসার সুযোগের জন্য নয়; এটি সমর্থন এবং নতুন ধারণার একটি চমৎকার উৎস হতে পারে। আপনার আশেপাশের লোকদের (যেমন আপনার মধ্যস্থতাকারী, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, বাড়িওয়ালা বা প্রতিবেশী ব্যবসা) বা আপনার এলাকার অনলাইন ফোরাম এবং Facebook কমিউনিটি গ্রুপগুলির কাছ থেকে পরামর্শ চাইতে দ্বিধা করবেন না।

 

২৩. মিতব্যয়ী হোন – মনে রাখবেন আপনি একজন স্টার্ট-আপ

 

অভিনব অফিস, ব্যয়বহুল সরঞ্জাম এবং ওভার-দ্য-টপ মার্কেটিং-এ ছড়িয়ে পড়ার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করুন। আপনার কোম্পানির জীবিকা নির্ভর করে আপনার ওয়ালেটে যা আছে তার উপর তাই প্রতিটি সেন্ট অবশ্যই ট্রিপল চেক করা উচিত। কম ওভারহেড বজায় রাখুন এবং কার্যকরভাবে আপনার নগদ প্রবাহ পরিচালনা করুন।

 

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে অনেক পরিশ্রম, অনেক দূরদৃষ্টি এবং অনেক অধ্যবসায় লাগে। এই ২৩ টি টিপস, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে যারা ইতিমধ্যে সফলতা পেয়েছেন, আপনাকে পথটি আরও সহজে নেভিগেট করতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *