ধনীরা কেন বিলাসিতায় কম খরচ করে: অর্থনীতির ৭০/৩০ নিয়ম

গত বছর আমি ফিটনেস এবং লাইফস্টাইলকে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিতে শুরু করেছি। অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যায়ামের চেয়ে বরং ‘ডায়েট’ কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। যেহেতু ব্যায়াম আমাদের ক্ষুধাবোধ বাড়িয়ে দেয়, এবং নিজেকে টেকসইভাবে ক্ষুধার্ত করার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয় আমাকে বলা হয়েছিল- বেশিরভাগ ফিটনেস কোচ তাদের ক্লায়েন্টদের বলে যে তাদের খাদ্যাভ্যাস এ পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, মানুষ তাদের ওজনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখায় তার ৭০%-৭৫% খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে এবং শুধুমাত্র ২৫%-৩০% ব্যায়ামের উপর ।

এটি আমাকে কিছুটা অবাক করেছে এবং আমি নিশ্চিত যে অনেক লোককেও তা করেছে।


এটা আমার উপলব্ধি কিছুটা পরিবর্তন করলো। ফাইন্যান্স ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার ফলে আমি যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছি তা হল যে অনেক উচ্চ-আয়ের ব্যক্তি ধনী নয় ! এমন অনেক লোককে আমি চিনি যারা ৫০,০০০ ডলার আয় করে বর্তমানে ২M ডলার সম্পদের মালিক ।

আবার এমন অনেক লোক দেখেছি সমান আয় করেও এখন যাদের সম্পদ শূন্যের কাছাকাছি । আমার পরিচিত একজন ব্যক্তি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ২০ বছর ধরে ক্রমাগত ১৫,০০০ ডলার ( after tax ) আয় করেও এখন তার নামে মাত্র ১০০,০০০ ডলার আছে।


এটা কিভাবে সত্য হতে পারে? আসলে, সত্যটি হল ‘গুড স্পেন্ডিং হ্যাবিট্স আর একচুয়েলি দ্য বিগেস্ট সৌর্স অব ওয়েলথ’, অর্থাৎ – ব্যয় এর অভ্যাস এর উপর আসলে সম্পদ অর্জনের বিষয় অনেকাংশে নির্ভরশীল। এবং তা বেশি উপার্জনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ।

নিশ্চয়ই জানেন – মাইকেল জ্যাকসন তার ক্যারিয়ারে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেও দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে ছিলেন।


যদিও বাজার ঐতিহাসিকভাবে ‘আপ এন্ড ডাউন’ হলেও সামগ্রিকভাবে সময়ের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পায়। তাই সঠিক ইনভেস্ট এমন লোকদের উপকৃত করে যারা ধারাবাহিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং অল্প বয়সেই বিনিয়োগ শুরু করে।


একটি সহজ উদাহরণ, ধরুন এক ব্যক্তি যিনি ২২ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করেন এবং ৪০ বছর ধরে এই ইনভেস্ট চালিয়ে যান। যদি তিনি গড়ে ১০০ ডলার করে সঞ্চয় করেন তাহলে গড় রিটার্ন হিসেবে তাঁর ৬২ বছর বয়সে অ্যাকাউন্টের মূল্য হবে আজকের টাকায় প্রায় ২৬৪,০০০ ডলার ।

আর যদি তিনি ৫০০ ডলার করে সঞ্চয় করেন তাহলে অ্যাকাউন্টটির মূল্য হবে ১.৩ M ডলার এবং ১,০০০ ডলার করে হলে তা তাঁর ৬২ বছর বয়সে আজকের টাকায় ২.৬ M ডলার হবে। অপরদিকে একজন খুব ভাল বেতনভোগী ব্যক্তি কিন্তু তাঁর ‘ব্যাড স্পেন্ডিং হ্যাবিট্স’ আছে, তিনি যদি তাঁর ৫০ বয়সেও বিনিয়োগ শুরু করেন তবে 1M- 3M ডলার সংগ্রহ করতে কষ্টকর হবে।



আরও একটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যান দেখা যাক ! আসুন দুজন লোকের তুলনা করি যারা মাসে $ 500 করে বিনিয়োগ করছেন এবং ধরুন তারা উভয়েই উত্তরাধিকার সূত্রে অপ্রত্যাশিত আরো এক লাখ $ ১০০,০০০ করে পান। ১ম ব্যক্তি প্রতি মাসে মাত্র $ ৫০০ বিনিয়োগ করেন কিন্তু প্রাপ্ত ১০০K খরচ করে ফেলেন, যেখানে ২য় ব্যক্তি সেই পুরো ১০০K সহ মাসে $৫০০ করে বিনিয়োগ করেন। তাহলে ৩০ বছর পর কি দেখা যায়? ১ম ব্যক্তির আজকের টাকায় প্রায় $ ৫৮৮,০০০ থাকবে। যেখানে ২য় ব্যক্তির থাকবে $ ১,৩৫০,০০০ … প্রকৃত অর্থে শুধুমাত্র ‘কন্সাম্পশন ডিলেয়িং’ -র মাধ্যমে এই ৭৫০,০০০ ডলার এর পার্থক্য। দেখলেন তো !


সম্ভবত এটিও আশ্চর্যজনক নয় যে অনেক প্রতিবেদনে বলা হয় – ‘রিচ পিপল আর লেস লাইকলি টু বাই লাক্সারি গুডস’। ধনীরা বিলাসবহুল পণ্য কেনায় কম আগ্রহ দেখায় ।



(নোট : নিবন্ধটি বলছে যে বিনিয়োগ থেকে ৭০% + বিনিয়োগ থেকে ‘প্রাপ্ত রেওয়ার্ডস’ শুধু ব্যয় করার অভ্যাস থেকে আসে এবং বাকি ৩০% আসে বেতন থেকে । যেহেতু সম্পদ শুধু আয়-ব্যয় = উদ্বৃত্ত x চক্রবৃদ্ধি আয়, ম্যাথ নির্দেশ করে যে ব্যয় এই সমীকরণের একটি হিউজ পার্ট)

লেখক : আদম ফায়েড
অর্থনীতি বিশ্লেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *