কেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল কাতার বিশ্বকাপে শিরোপার দাবিদার | Why Argentina Brazil Title Contenders for Qatar World Cup?

দক্ষিণ আমেরিকা সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ের পর বিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এ মহাদেশের সাম্প্রতিক বাছাইপর্বের সেট থেকে অনুমান করা যায় যে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা কাতারে শিরোপার শক্তিশালী কন্টেন্ডার হয়ে উঠেছে এবং এই ধারণাটি অন্যান্য অঞ্চলের প্রতিপক্ষের সাথে তাদের প্রথম প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ গুলোতে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন ইতালির সাথে ওয়েম্বলিতে আর্জেন্টিনার ফাইনালিসিমা মুখোমুখি হয়েছিল ৩-০ গোলে, যেখানে ইতালীয়রা নিজেদের ভাগ্যবান বলে গণ্য করতে পারে গোল ব্যবধান আরো বেশি ছিল না। ম্যাচটি ছিল গত বিশ্বকাপের পর থেকে আর্জেন্টিনার অসাধারণ অগ্রগতির আরেকটি নমুনা ! বিশেষ করে ভাবুন, ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার পর থেকে ৩২ ম্যাচ আগে তারা তাদের শেষ পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিল।

তাদের খেলার অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছিল, এবং মিডফিল্ড অ্যাঙ্করম্যান লিয়ান্দ্রো পেরেদেসের অনুপস্থিতির ফলে তাদের পাসিং এর সাবলীল ভাব কম দেখাচ্ছিল — গুইডো রদ্রিগেজ ছিলেন একজন আনস্টিডি ও রক্ষণাত্মক মানসিকতার রিপ্লেসমেন্ট । কিন্তু আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ নেয় আর্জেন্টিনা।

ইতালি কখনই জিওভানি লো সেলসোর উপর আঁকড়ে ধরতে পারেনি এবং রদ্রিগো ডি পলের সাথে তারা লিওনেল মেসিকে মাঠের এমন জায়গায় নিয়ে আসতে শুরু করেছিল যেখানে সে ইতালীয় রক্ষণকে আঘাত করতে পারে।

এটি যেন গত তিন বছরে আর্জেন্টিনার হলমার্ক!: মেসি এবং সেন্টার ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্টিনেজের মধ্যে এভার ইম্প্রুভিং রিলেশন এবং অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া দ্বারা যা চূড়ান্ত ফ্লারিশ ঘটায়।

এদের সামলানো ইতালির জন্য ‘টু মাচ’ হয়েছিল, যারা হাফ টাইমের আগেই পরাস্ত হয়েছে । বল উঁচু করে জিতেছে আর্জেন্টিনা। লো সেলসো এবং মেসির যোগাযোগ ভালো ছিল যিনি জিওভানি ডি লরেঞ্জো এবং মার্টিনেজ সহ দুর্দান্ত সমন্বয় দেখিয়েছে । তারপর মার্টিনেজ তার টিপিকাল খেলায় ফিরে এসে সাহায্য করেন।

এই জাতীয় দ্বিতীয়ার্ধের বিবেচনাগুলি বাদ দিয়ে, এই দলের বড় শক্তি হল কোচ লিওনেল স্কালোনি যিনি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের-ই সম্ভবত সেরা কালেকটিভ স্ট্রাকচার দিয়ে মেসিকে সারাউন্ড করে রেখেছেন।

সত্য, তবে গোল লাইনে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এবং সেন্টার ব্যাক ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর ড্রামাটিক ইমপ্রুভমেন্ট সত্ত্বেও রক্ষণাত্মক ইউনিট এখনও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তার সঙ্গী নিকোলাস ওটামেন্ডি অবশ্যই তার সেরা অতীত ফেলে এসেছেন । ইতালির একটি পরীক্ষা দেওয়ার মতো গতি বা প্রতিভার অভাব ছিল এবং এটি অসম্ভাব্য যে রবিবারের প্রতিপক্ষ এস্তোনিয়া খুব চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হবে।

আর্জেন্টিনার খেলার পেটার্ন ও পরিবর্তন এসেছে। আগে আর্জেন্টিনার একটি পরিকল্পনা ছিল: মেসিকে বল দিন এবং চেয়ে থাকুন । প্ল্যান বি-ও ছিল মেসিকে বল দেওয়া এবং আশা করা। কোনও প্ল্যান সি ছিল না বললেই চলে । কিন্তু এখন, ওয়েম্বলিতে তাদের প্রথম জয়ের মাধ্যমে হাইলাইট করেছে , তাদের কাছে এখন অনেক বেশি সুসংগত এবং কালেক্টিভ কিছু আছে!

আর অনেকটা একই কথা প্রযোজ্য ব্রাজিল এবং নেইমারের সাথে তার দলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এটি আর শুধুমাত্র পিএসজি তারকার দিকেই চেয়ে থাকা নয় — এবং শুধুমাত্র ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বিশ্বমানের প্রতিভা হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার কারণেই নয়।

ব্রাজিলেরও একটি দল রয়েছে, যারা দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ৫ -১ ব্যবধানে দুর্দান্ত জয়ের পর কোচ টিটেকে আরো প্রেরণা যোগাবে তার দোল নিয়ে ।

গত কয়েক মাস ধরে ব্রাজিল আক্রমণাত্মক বৈচিত্র নিয়ে কাজ করেছে, এবং তার সবই সিউলে দেখা গিয়েছে ।

ডানদিকে রাফিনহা এবং বাম দিকে ভিনিসিয়াস দুই উইঙ্গার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। কিন্তু ভিনিসিয়াস এখনও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল থেকে রিকোভার করতে লড়াই করছেন যাকে শুধুমাত্র শেষ বিশ মিনিটের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। Tite কিছুটা পূর্বের পরিকল্পনায় ফিরে যান। রাফিনহা তার জায়গা ধরে রেখেছে। কিন্তু ডানদিকে তিনি ব্যবহার করেছেন বহুমুখী মিডফিল্ডার লুকাস পাকেতাকে।

২০১৪ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে সেই বিপর্যয়কর ৭ -১ হারের পর থেকে তারা এখন ঠিক ১০০ টি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু প্রতিটি দৃঢ়প্রত্যয়ী পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তারা নিজেদের সেই ঐতিহাসিক অপমান এর সাথে যেন দূরত্ব স্থাপন করেছে।


তাই বলা যায়, কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপার জন্য ২০ বছরের ড্রাই রান শেষ করার স্বপ্ন দেখার অনেক কারণ তাদের রয়েছেই !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *