প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার কারণ : প্রক্রিয়াজাত মাংসে বাড়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি : নতুন গবেষণা

প্রোস্টেট ক্যান্সার কেন হয়? প্রক্রিয়াজাত মাংস থেকে দূরে থাকুন।
​​

মায়ো ক্লিনিকের মতে, প্রোস্টেট ক্যান্সার অনেকের জীবনকে ধরাশায়ী করেছে কারণ এটি ক্যান্সারের সবচেয়ে ‘কমন টাইপ’ -গুলোর একটি। বয়স, জাতি, স্থূলতা এবং পারিবারিক ইতিহাস এমন কয়েকটি কারণ এই রোগের ক্ষেত্রে নির্ধারক -যে কার এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘আনহেলদি ডায়েট’ যাতে প্রক্রিয়াজাত মাংসের ‘ফেয়ার শেয়ার’ রয়েছে তা আপনার প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউরোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে ১২,০০০ মানুষের কাছ থেকে রক্ত ​​নেওয়া হয়েছিল। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তাদের জীবনধারার বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করা হয়।


২০২১ জিনোম-ওয়াইড অ্যাসোসিয়েশন এই স্টাডির তথ্য ব্যবহার করেছে– দেখা যায় এই পরীক্ষিত মানুষ গুলো একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করেছিল এবং হেলদি ডায়েট মেনে চলেছিল (মাছ এবং টমেটো সমৃদ্ধ খাবার সহ, তবে প্রক্রিয়াজাত মাংস নয়)।

এর সাথে তারা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যায়াম, এবং ধূমপান এড়িয়ে চলা — এগুলো মেনে চলেছিল।

স্টাডিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা নির্ধারণ করে — এমন পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার জেনেটিক ঝুঁকি বেশি ছিল, কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলায় তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৫% কমে যায়।

“এই স্টাডি তে পাওয়া তথ্য দেখে পুরুষদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার জন্য উত্সাহিত হওয়া উচিত ৷

ইউরেক অ্যালার্ট এর রিপোর্ট অনুসারে — “প্রোস্টেট ক্যান্সারের বর্ধিত জেনেটিক ঝুঁকিতে থাকা পুরুষদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে,” বলেছেন ব্রিগ্যামের ইউরোলজি বিভাগের সংশ্লিষ্ট লেখক আনা প্লাইম, পিএইচডি, !

“আমরা যে বিষয়গুলি অধ্যয়ন করেছি তার মধ্যে, একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা, সেইসাথে ধূমপান না করা, সবচেয়ে ‘ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর্স’ হিসাবে দেখা গেছে।”

“আমি স্টাডি’টিকে বেশ আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছি, কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সম্পর্কে ধারণা থাকার কারণে, খুব বেশি এতে আশ্চর্যান্বিত হইনি ,” ড. ডানা এলিস হান্স, পিএইচডি, এমপিএইচ, আরডি, সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টার, ইউসিএলএ ফিল্ডিং স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর সহকারী অধ্যাপক বলেন !

“আমি মনে করি বেশিরভাগ লোকের কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক দিকটি হ’ল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিশেষত বংশগত ক্যান্সারের ঝুঁকিতে ডায়েট কতটা ভূমিকা পালন করে, এবং কীভাবে একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং জীবনধারা সেই ঝুঁকিটিকে এতটা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে সেই বিষয়টি।”

হুনস ব্যাখ্যা করেন যে “স্বাস্থ্যকর খাদ্য মারাত্মক প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে কারণ অনেক খাবার (প্রক্রিয়াজাত মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার/চিনি) আছে যা হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে (টেস্টোস্টেরন/ইস্ট্রোজেন ইত্যাদি)।

” এছাড়াও, প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ কিছু ক্যান্সার, হরমোনের মাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়। যা একটি ভালো কারণ হতে পারে যে গরুর দুধ এড়িয়ে চলা বা প্লান্ট-বেসড খাবার খাওয়া পুরুষদের তুলনায় কেন উচ্চ মাত্রায় গরুর দুধ (যাতে প্রাকৃতিকভাবে ইস্ট্রোজেন থাকে) পান করা পুরুষরা প্রোস্টেট ক্যান্সারের বেশি ঝুঁকিতে থাকে।”

এই স্টাডিতে উল্লেখ করা ‘স্পেসিফিক ফুডস’ যেগুলো প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে, হুনস ব্যক্ত করেন যে — “উচ্চ মাত্রার লাইকোপিন সমৃদ্ধ টমেটো (রান্না অবস্থায় বেশি /বেশি জৈব উপলভ্য) প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কারণ এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট।


” একই ভাবে, মাছের স্বাস্থ্যকর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে, যা আমরা শেওলা সহ উদ্ভিদ উত্স থেকেও পেতে পারি।”

অন্যদিকে, “প্রক্রিয়াজাত মাংস একটি পরিচিত প্রদাহজনক খাবার (ইনফ্লামেটরি ফুডস) যা ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর TMAO এবং IGF-1 বাড়ায়। এগুলো শরীরের অন্যান্য হরমোনকেও প্রভাবিত করতে পারে যেহেতু সবকিছুই পরস্পর সংযুক্ত।

” এই কারণেই “প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া, প্রদাহ বৃদ্ধি পাওয়া এবং নির্দিষ্ট হরমোন এর অস্তিত্ব কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”

কীভাবে খাদ্য আপনার রোগের বিকাশের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে তা এবং “মারাত্মক” প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলি জানতে ও মানতে সচেষ্ট হোন

Leave a Comment