যক্ষ্মা রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা

যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের রোগ নয়

যক্ষ্মা একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা শ্বাসযন্ত্র, ত্বক, অন্ত্র, হাড় এবং অন্যান্য অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর যক্ষ্মা ফুসফুসে হয়ে থাকে।

যক্ষ্মা বায়ুবাহিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই জীবাণু অন্য কোনো ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করলে সে ব্যক্তিও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে।

যক্ষ্মার জীবাণু শরীরের যেকোনো ক্ষত বা ছিদ্রপথে প্রবেশ করতে পারে। তাই, অস্ত্রোপচারের পরে যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যক্ষ্মা শরীরের যেকোনো অঙ্গে হতে পারে এমন কিছু উদাহরণ:

  • ফুসফুস: ফুসফুসের যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই ধরনের যক্ষ্মায় রোগীর কাশি, কফ, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এবং ওজন হ্রাস হতে পারে।
  • পরিপাকতন্ত্র: পরিপাকতন্ত্রের যক্ষ্মাতে রোগীর পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, এবং ওজন হ্রাস হতে পারে।
  • ত্বক: ত্বকের যক্ষ্মাতে রোগীর ত্বকে লালচে দাগ, ক্ষত, বা ফোড়া হতে পারে।
  • অস্থিসন্ধি: অস্থিসন্ধির যক্ষ্মাতে রোগীর হাড়ের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং নড়াচড়া করার সময় অসুবিধা হতে পারে।

যক্ষ্মা একটি গুরুতর রোগ। তাই, যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

যক্ষ্মার জীবাণু, মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস, শরীরের কোনো ক্ষত বা ছিদ্রপথে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ছিদ্র করা হয়। এই ছিদ্রগুলো দিয়ে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়। এই ছিদ্রগুলো যক্ষ্মার জীবাণুর জন্য প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করতে পারে।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যেসব অঙ্গের অস্ত্রোপচার করা হয়, সেসব অঙ্গে যক্ষ্মার সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। যেমন, পেট, অন্ত্র, কিডনি, এবং মূত্রনালী।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের পর যক্ষ্মার সংক্রমণ হলে, সেটি সাধারণত ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও, অস্ত্রোপচারের স্থানে যক্ষ্মার ক্ষতও হতে পারে।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ রোধ করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  • অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর যক্ষ্মা পরীক্ষা করা।
  • অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগীর যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করা।
  • অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে যক্ষ্মা চিকিৎসা দেওয়া।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই, ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর যক্ষ্মা পরীক্ষা করা এবং যক্ষ্মার ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

যক্ষ্মা একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা শ্বাসযন্ত্র, ত্বক, অন্ত্র, হাড় এবং অন্যান্য অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি একটি বায়ুবাহিত রোগ, যার অর্থ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হবে এবং ১০,০০০ মানুষ যক্ষ্মায় মারা যাবে।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচার একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা ছোট ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে করা হয়। এই পদ্ধতিটি traditional open surgery এর তুলনায় কম আক্রমণাত্মক এবং রোগীর জন্য আরও আরামদায়ক।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, এই পদ্ধতিতে শরীরে ছোট ছোট ছিদ্র করা হয়, যা যক্ষ্মার জীবাণুর জন্য প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করতে পারে।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচার এবং যক্ষ্মার ঝুঁকি

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি নিম্নলিখিত কারণের উপর নির্ভর করে:

  • অস্ত্রোপচারের ধরন: পেট, অন্ত্র, কিডনি, বা মূত্রনালীর মতো অঙ্গের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • রোগীর যক্ষ্মার অবস্থা: যক্ষ্মার রোগী যদি সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত থাকে, তাহলে তার ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগীর যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করা: অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগী যদি যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তাহলে তার যক্ষ্মার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ প্রতিরোধ

ল্যাপারোস্কপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যক্ষ্মার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  • অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর যক্ষ্মা পরীক্ষা করা: অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর যক্ষ্মা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা উচিত যে রোগী সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত কিনা।

  • অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগীর যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করা: অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগীকে যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করা উচিত। এটি করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
    • অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর মুখ এবং নাককে একটি মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখা।

    • অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রোগীকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে রাখা।

  • অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে যক্ষ্মা চিকিৎসা দেওয়া: যদি অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর যক্ষ্মার পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল আসে, তাহলে অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে যক্ষ্মা চিকিৎসা দেওয়া উচিত।

যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়ে যেভাবে

যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই জীবাণু অন্য কোনো ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করলে সে ব্যক্তিও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে।

যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ানোর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে হবে। সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সক্রিয় থাকে এবং তারা বাতাসে এই জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।

যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ানোর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতে হয়। সাধারণত, এক ঘন্টার মধ্যে ১০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলা বা একই ঘরে অবস্থান করলে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

যক্ষ্মার জীবাণু দুধের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে, এটি খুবই বিরল। জীবাণুমুক্ত করা হয়নি এমন দুধ পান করলে বা তা দিয়ে তৈরি অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করলে যক্ষ্মার জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে।

যক্ষ্মা একটি গুরুতর রোগ। তাই, যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

যক্ষ্মা ছড়ানো রোধের উপায়

যক্ষ্মা ছড়ানো রোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা এবং তাদের চিকিৎসা করা।
  • যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো।
  • যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র, যেমন তোয়ালে, কাপড় ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা।
  • জীবাণুমুক্ত দুধ পান করা।

যক্ষ্মা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা এবং তাদের চিকিৎসা করা। যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের থেকে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি কমে যায়।

যাঁরা যক্ষ্মার ঝুঁকিতে আছেন

যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগের জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। যেসব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বা ফুসফুস কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত থাকে তারা যক্ষ্মার ঝুঁকিতে থাকেন।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা যক্ষ্মার ঝুঁকিতে থাকেন:

  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসকারীরা
  • ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা
  • বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এমন বদ্ধ পরিবেশে বসবাসকারীরা
  • ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি বা ফুসফুসের রোগ বা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিরা
  • সিগারেটসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনকারীরা
  • ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা
  • ৬৫ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিরা

  • ওজন কম কিংবা কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে এমন ব্যক্তিরা
  • ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপি চলার সময় বা স্টেরয়েড বা এ–জাতীয় কোনো ওষুধ গ্রহণকারীরা
  • চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা

যক্ষ্মার ঝুঁকি কমাতে করণীয়

  • ধূমপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
  • যদি আপনার যক্ষ্মার কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।